সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি হওয়ার কারণে এখন এই প্রশ্ন উঠছে যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট এই দেশটিতে এত বেশী সংখ্যক বাংলাদেশি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরকে একটি সফল উদাহরণ হিসেবেই এত দিন মনে করা হচ্ছিল।
করোনাভাইরাস শব্দটি যখন অনেকের কাছেই পরিচিত হয়ে ওঠেনি, তখনই সিঙ্গাপুর দেশটিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে এবং আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে।
এর মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছিল দেশটি। কিন্তু অতি সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেশ দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করছে।
বৃহস্পতিবার দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ ২৮৭ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১৪২ জন।
সিঙ্গাপুরে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসী শ্রমিক। এদের মধ্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করে তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের সংখ্যাটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,৯১০ জন, যাদের মধ্যে ৩৬৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিক।
আক্রান্তদের মধ্যে একজন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাংলাদেশি শ্রমিকরা কেন বেশি আক্রান্ত?
দীর্ঘদিন যাবত সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন বাংলাদেশি মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মঞ্জুরুল মান্নান। সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখেন মি. মান্নান।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশিদের মাঝে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার একটি কারণ অল্প জায়গায় অনেক বেশি শ্রমিকের বসবাস।
এছাড়া সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবসময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করতে পছন্দ করেন, ফলে তাদের মধ্যে বেশ দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে মি. মান্নান উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “বাঙালি শ্রমিকদের সমস্যা হচ্ছে, প্রতি রবিবার তারা এক জায়গায় জড়ো হয়। মোস্তফা মার্টের সামনে একটা মাঠ আছে। সেখানে তারা দলবদ্ধভাবে বসে আড্ডা দেয়, খাবার খায়। ইন্ডিয়ান বা চায়নিজরা এটা করে না।”
“রবিবার যদি আপনি মোস্তফা মার্ট এলাকায় যান, তাহলে নড়তেই পারবেন না। লোক গিজ-গিজ করে,” জানান মি. মান্নান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা সবাই এক জায়গায় থাকতে চায়।
এছাড়া শুরু থেকেই করোনাভাইরাস নিয়ে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে তেমন কোন সচেতনতা ছিল না বলে জানান এই সিঙ্গাপুর প্রবাসী।
তিনি বলেন, “তাদের ধারণা ছিল যে করোনাভাইরাস তাদের ধরবে না। তারা মনে করতেন, এটা শুধু চায়নিজদের হয় আর বয়স্কদের হয়।”